উখিয়ায় ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং, বাড়ছে আতংক

এন.এইচ নিরব •

পর্যটন নগরী কক্সবাজারের উখিয়ার আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে “কিশোর গ্যাং”। এলাকাভিত্তিক স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং রোহিঙ্গা কিশোরদের নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ।  যাদের কারণে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা। যৌন হয়রানির মুখে অনেক ছাত্রী পড়াশোনা ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছে। শুধু যৌন হয়রানি নয়, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ড, মাদক-সেবনসহ নানান ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড জড়িয়ে পড়তেছে উঠতি বয়সী কিশোরে।

দেখা যায়, প্রতিনিয়তে মরণনেশা ইয়াবা-ফেন্সিডিল, গাজা ও হিরোইন মতো মরণ নেশায় আসক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের মাদকের টাকা জোগাড় করতে তারা ছিনতাই চুরি, ডাকাতি শুরু করেছে।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নজনের ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে করছে ব্ল্যাকমেইল। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সম্প্রতি ‘কিশোর গ্যাংয়’র লাগাম টানতে কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ৫ দিনে ৭০ জন আটক করেছে পুলিশ। তার মধ্যে ১৫ জনকে কারাগারে পাঠানোর খবর প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যম।

সাম্প্রতিক কিশোর গ্যাংয়ের কিছু ঘটনার তথ্য বিবরণ: ঘটনা ১ 

রোববার (১০ জানুয়ারি) ভোররাতে উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের কোটবাজার স্টেশনে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী। নিহত মো. ফোরকান আহমদ ওরফে কালু (১৪) উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের তেলিপাড়ার বশির আহমদের ছেলে। তবে অভিযুক্ত রোহিঙ্গা যুবক।

ঘটনা ২ঃ সোমবার (৩১ মে) ভোররাত ৫ টায় পালংখালী গয়ালমারা এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কিশোরের একটি সংঘবদ্ধ দল সড়কে দা, ছুরি, হাতুড়ি নিয়ে সিএনজি ও টমটম থামিয়ে যাত্রীদের জখম করে ৬৫ হাজার টাকা ও ৫টি স্মার্টফোন ছিনতাই করেছে।

ঘটনা ৩ঃ শনিবার ( ২৪ এপ্রিল) উখিয়ার রাজাপালং জাদিমুড়া এলাকায় সড়কে দিনেদুপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে যাত্রীরা।

ঘটনা ৪ঃ গত ১৭ মে রত্না পালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা গ্রামের ফরিদুল আলমের ছেলে তানভির হোসাইনকে প্রকাশ্য দিবালোকে কোটবাজার পেট্রোল পাম্পের পাশে পানের দোকানের সামনে তাকে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে। তানভির হোসাইন আহত হওয়ার পর উখিয়ায় কিশোর গ্যাং কালচার আলোচনায় আসে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছুরিকাঘাত করে মারাত্মকভাবে আহত করে।

ঘটনা ৫ঃ সম্প্রতি কোটবাজার, উখিয়া, ভালুকিয়া, মরিচ্যা, সোনাপাড়া সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার স্মার্টফোন, গয়নাগাটি, ঘরের বিভিন্ন দামে জিনিস চুরির অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হয়েছে বিভিন্ন এলাকায় কিশোর ।

এ বিষয়ে ডঃ জাহাঙ্গীর আলম (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) তিনি বলেন, পিতা-মাতার অসচেতনতার অভাবে কিশোর বয়সে অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে কোমলমতি শিশু কিশোর। করোনাকালে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিশু-কিশোর মোবাইল গেমস, ইউটিউবে, টিকটকসহ নানান ধরনের ডিজিটাল বিনোদনের দিকে ঝুঁকছে ফলে বিভিন্ন কিছুতে উদ্বুদ্ধ হয়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করতেছে কিশোররা। তাই আমি মনে করি পরিবার, সমাজ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনায় কিশোর গ্যাং নির্মূল করা সম্ভব।

সোহেল খান মানবাধিকার কর্মী বলেন, উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্টেশন সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রুপ অন্য গ্রুপের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় প্রতিনিয়ত যা মানবতা লঙ্ঘন। ইয়াবা কারবারে বিপুল টাকা আয়ের সুযোগ দেখা সাথে বিভিন্ন ধরনের মাদক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হস্তান্তর করার জন্য লোভনীয় অফার দিয়ে থাকে।

ফলে দেখা যায়, উখিয়ার হাজার হাজার তরুণ কিশোর গ্যাং এর সাথে লিপ্ত হয়ে আছে। কিশোর গ্যাং এর পেছনে ইন্দনদাতাকে খুঁজে বের করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, তা না হলে কিশোর গ্যাংয়ের নির্মূল করা সম্ভব হবে না।

কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কিশোর গ্যাং বা অল্প বয়সের অপরাধীরা শুধু শহর কেন্দ্রিক নয় পুরো উপজেলা বা গ্রামেগঞ্জের অবস্থা আরও ভয়াবহ।

মূলত তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, মাদকের টাকার ছড়াছড়ি, সঙ্গে কিছু অসৎ গ্রাম পর্যায়ের নেতার কারণে কিশোর অপরাধী বাড়ছে। দ্রুত এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অবস্থা ভয়াবহ হবে। আর এই পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী অভিভাবকরা। তারাই সন্তানদের সঠিক দায়িত্ব পালন না করায় তারা অপরাধী হয়ে উঠছে।